সুনামগঞ্জ , রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হাওরে সক্রিয় শিকারিচক্র মেলার আয়োজন বন্ধ না করলে কঠোর আন্দোলন আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই : মির্জা ফখরুল রবিবার ইব্রাহিমপুরে ওয়াজ মাহফিল ধর্মপাশায় শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান কৃষক আবেদন করেছিলেন শনির হাওরে, প্রকল্প পেলেন মহালিয়া হাওরে জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সাধারণ সম্পাদক-আব্দুল্লাহ আল মামুন বাড়ছে সরিষা চাষ : হাওরে উৎপাদন হবে ৬৫ কোটি টাকার সরিষা সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন : ৬ থেকে ৯ তলা পুড়ে ছাই তাহিরপুরে পিআইসি গঠনে অনিয়ম : প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতাদের টাঙ্গুয়ার হাওরে সংরক্ষিত জলাশয়ে খাস কালেকশনের নামে মৎস্য আহরণ! ৯০ লক্ষাধিক টাকার অবৈধ পণ্য জব্দ সুনামগঞ্জে বাণিজ্যমেলা শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকের ৭২ বছরে পদার্পণ উদযাপিত দোয়ারাবাজারে খাস জমি দখলের হিড়িক, গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির নির্বাচন আজ তকমার রাজনীতি হালুয়ারগাঁওয়ে নিরীহ পরিবারের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, আহত ৩ মল্লিকপুরে চিকিৎসকের ওপউর হামলা, ফার্মেসিসহ ৩ প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

হাওরে সক্রিয় শিকারিচক্র

  • আপলোড সময় : ২৮-১২-২০২৪ ০৯:২৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-১২-২০২৪ ০৯:২৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
হাওরে সক্রিয় শিকারিচক্র
বিশেষ প্রতিনিধি :: বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরে নানাভাবে ফাঁদ পেতে ও দেশিয় প্রজাতির যন্ত্র দিয়ে পাখি শিকার করছে একটি চক্র। সেই পাখি বিক্রির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও শিকার করা পাখি দিয়ে লাইভ পোস্ট করছে শিকারিরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাখি শিকারি লাইভধারী ভিডিও করা যুবকই নয় টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টেই শিকারিরা চুরি করে পাখি শিকার করছে দীর্ঘদিন ধরে। শীত মওসুমে তাদের শিকার তৎপরতা বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে তৎপর হওয়ার দাবি জানিয়েছে পরিবেশ সংগঠকরা। পাখি শিকারের কারণে স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে ২০০৩ সাল থেকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্য রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্র পূর্বের অবস্থায় ফেরাতে হাওর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় সরকার। আইইউসিএনের (আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণকেন্দ্র) মাধ্যমে সরকার পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ করে প্রায় দেড় দশক। ২০১৮ সালে সংরক্ষণ মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন জেলা প্রশাসন কাগজে-কলমে ব্যবস্থাপনায় আছে। কিন্তু লোকবলের কারণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদারকিতে নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবিদরা জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তৃত জলরাশি, মাছ, গাছ, প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্রের কারণে শীতে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বারো মাস হাওরের সংরক্ষিত বিভিন্ন কান্দায় দেশি প্রজাতির পাখিও বাস করে। হাওরের লেচুয়ামারা ও বেরবেরিয়া জলাশয় দুটি পাখির অভয়ারণ্য সংরক্ষণ চলাকালে ঘোষণা করে সরকার। শীত মওসুমে এই দুটি জলাশয় ঘেরা হিজল করচ ও নলখাগড়া বনে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। জলাশয় দুটি ঘিরে বসে পাখপাখির মেলা। পাখির আবাসস্থল ইকইরদাইড়, বিয়াসখালি, রৌয়া, রুপাভুই, হাতিরগাতা, চটাইন্ন্যা জলাশয় ও আশপাশের হিজল করচের বাগানেও পাখি গড়ে তোলে বাস্তুসংস্থান। টাঙ্গুয়ার হাওরে পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় প্যালাসিস ঈগলসহ কালেম, পানকৌড়ি, ভূতিহাঁস, পিয়ংহাঁস, খয়রাবগা, লেঞ্জাহাঁস, নেউপিপি, সরালি, রাজসরালি, চখাচখি, পাতি মাছরাঙা, পাকড়া মাছরাঙা, মরিচা ভূতিহাঁস, সাধারণ ভূতিহাঁস, শোভেলার, লালশির, নীলশির, পাতিহাঁস, ডাহুক, বেগুনি কালেম, গাঙচিল, শঙ্খচিল, বালিহাঁস, ডুবুরি, বক, সারসসহ প্রায় ২১৯ প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি রয়েছে বলে জানিয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংগঠন সিএনআরএস। নানা ধরনের পাখি হাওরের বিস্তৃত জলে ডুবসাতার খেলে এবং দীর্ঘ হিজল-করচের বাগানে আবাস গড়ে তোলে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের নানা প্রজাতির জলাবন, হিজল করচ, নলখাগড়ার বন কমে যাওয়া, বেড়াতে আসা পর্যটকদের উৎপাত, মাইক বাজিয়ে শব্দদূষণ করে পর্যটন করায় পাখি আগমন কমার অন্যতম কারণ। এছাড়া শীত মওসুমে চোরাই শিকারিরা পাখি শিকারে তৎপর হয়ে ওঠে। সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওরের লেছুয়ামারা, তেকুইন্যা, বেরবেরয়িা, হানিয়া-কলমাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে শিকারিরা দেশিয় ফাঁদ যন্ত্র দিয়ে পাখি শিকার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের দিলোয়ার হোসেন নামের এক যুবক সম্প্রতি ‘হাওরপাড়ের মানুষ’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পাখি শিকারের একাধিক ভিডিও ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। স্থানীয়ভাবে তৈরি কুচ ও নানা দেশিয় ফাঁদ দিয়ে প্রতি বছরই পাখি শিকার করছে সে। তার মতো আরো একাধিক ব্যক্তি এভাবে পাখি শিকার করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে বলে জানান স্থানীয়রা। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত সংগঠন সিএনআরএস (সেন্টার ফর নেচারাল রিসোর্স স্টাডি) এর সংশ্লিষ্টরা জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরের ৮৮টি গ্রামে ২৮টি ভিসিজি (ভিলেজ কনজারভেশন গ্রুপ), চারটি ইউনিয়ন ভিসিজি, ২টি উপজেলা ভিসিজি ও একটি জেলা ভিসিজি ইসিএ রোল, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও হাওর সংরক্ষণ নীতিমালা বাস্তবায়নে স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করছে। এই নীতিমালায় পাখি শিকার স্পষ্ট নিষিদ্ধ আছে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা আছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশকর্মী আহাম্মদ কবীর বলেন, মাছ, গাছ ও পাখিই ছিল টাঙ্গুয়ার হাওরের ঐতিহ্য ও সুন্দর। ২০০০ সালে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বিশ্ব ঐতিহ্য রামসার সাইট ঘোষণা করে দেশি-বিদেশি সংস্থার সহায়তায় সরকার প্রকৃতিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করলেও এই সংরক্ষণকালে প্রাণ ও প্রকৃতির ক্ষতি আরো হয়েছে। গাছগাছালি কমে যাওয়া, পর্যটকদের উৎপাতসহ নানা কারণে টাঙ্গুয়ার হাওরে অতিথি পাখি কমছেই। শীত মওসুম আসলে চোরাই শিকারি দেশিয় যন্ত্র কোচসহ নানাভাবে ফাদ পেতে পাখি শিকার করে। তারা পাখি বাজারজাত করার জন্য ফেসবুকেও পোস্ট দিচ্ছে। এভাবে অন্য চোরাই শিকারিরাও পাখি শিকারে উৎসাহিত হচ্ছে। অবিলম্বে প্রশাসনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে পাখি শিকারিসহ প্রকৃতি বিনাশীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংগঠন স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফ’ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠক সোহেল শ্যাম বলেন, এখন অতিথি পাখির আগমনের মওসুম। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি শিকার করে ফেসবুকে পোস্টও করছে শিকারিরা। আমরা জানতে পেরেছি টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দেশি যন্ত্র দিয়ে পাখি শিকার করছে স্থানীয় একাধিক শিকারি। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্য প্রাণী আইন সংরক্ষণে আরো উদ্যোগী হতে হবে। স্থানীয় সচেতন মানুষদের সচেতন করতে নিয়মিত কর্মসূচিও চালানো জরুরি। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে পাখি শিকারের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের চিন্তা-ভাবনা করছি। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমাদের লোকবল কম থাকায় এখন হাওরে নজরদারির জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যেতে পারেন না। কিছু আনসার আছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও সচেতন লোকজনের মাধ্যমে হাওর সংরক্ষণে আমাদের নজরদারি আছে। এর মধ্যেই পাখি শিকারের ঘটনা অবগত হয়ে রবিবার রাতেই শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান চালানো হয়েছে। পাখি শিকারিসহ টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সচেতনতা প্রয়োজন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
হাওরে সক্রিয় শিকারিচক্র

হাওরে সক্রিয় শিকারিচক্র